শীতকালীন শাকসবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

শীতকালীন শাক সবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমরা অনেকেই অনেক ধরনের শাকসবজি খেয়ে থাকি কিন্তু জানি না এর পুষ্টিগুণ গুলো কি কি এর উপকারিতা গুলো কি।

শীতকালীন-শাকসবজির-উপকারিতা

আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করবো। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে বুঝতে পারবেন শীতকালীন সবজির পুষ্টি কোন উপকারিতা গুলো কি। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্র : শীতকালীন শাকসবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

শীতকালীন শাকসবজির তালিকা

শীতকালে অনেক শাকসবজি পাওয়া যায়। আজকে আপনাদের জানাবো কোন কোন শাকসবজি শীতকালে পাবেন। 

সবজি 

ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, সিম, লাউ, টমেটো, মটরশুঁটি, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, মুলা, পেঁয়াজকলি, কেল, ব্রকলি, শালগম, বিট, পার্সনিপস, রুতাবাগ, বেগুন, বরবটি ইত্যাদি সবজি গুলো শীতকালে পাওয়া যায়।

শাক 

পালং শাক, লাল শাক, সবুজ শাক, সরিষা শাক, ইত্যাদি আরো অনেক ধরনের শাক শীতকালে পাওয়া যায়। এই সকল শাক সবজির ভেতরে অনেক ধরনের পুষ্টিগুণে ভরপুর। সকল সবজিতে অনেক উপকারিতা রয়েছে।

শীতকালীন শাকসবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

শীতকালীন অনেক ধরনের সবজি পাওয়া যায় যেই সবজিগুলো পুষ্টিগুনে ভরপুর। শীতের শুরুতে শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত শাকসবজি খেতে পারেন। সীতা সবজিতে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় খনিজ আছে, তার শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে। শীতের শুরুতে কয়েক ধরনের সবজি খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। সে ধরনের কয়েকটি সবজি সম্পর্কে জেনে নিন। 

শীতকালীন-শাকসবজির-পুষ্টিগুণ-ও-উপকারিতা

১. গাজর 

এই সবজির মধ্যে যে কত গুন আছে তা যদি আপনি জানতেন, তবে সকালে বিকেলে রাতে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় গাজরটি রাখতেন। গাজরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে উপকরণটি সেটি হল দৃষ্টিশক্তি বাড়ানো। গাজরের দ্রবণীয় ও অদ্রবনীয় দুই ধরনের আঁশ রয়েছে। যারা ওজন কমাতে চান, তাদের খাদ্য তালিকায় এই সময় অবশ্যই গাজর রাখা উচিত।

২. পালং শাক 

শীতে অনেকেরই প্রিয় এই পালং শাক। পালং শাকের স্বাদ নেওয়ার সময় তো এখনই। অন্যান্য শাকের চেয়ে পালং শাকের দ্বিগুণ আঁশ বা ফাইবার থাকে। এটা ভিটামিন সি, কে, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও ম্যাঙ্গানিজ আছে। এতে আছে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান। এর মধ্যে একটি হলো ফলেট। এটি মানুষের শরীরে নতুন কোষ তৈরি ও ডিএনএ মেরামতে ভূমিকা রাখে।

আরো পড়ুন : ফলমূল খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন


৩. মুলা 

মুলা নাম শুনলে অনেকে চোখ কুঁচকান। মূলা খেতে অনেকেই পছন্দ করে না। কিন্তু মুলাই মেলে নানা উপকার। তরকারি হিসেবে ও সালাতে নানাভাবে মুলা খাওয়া যায়। পুষ্টি বেদেরা বলেন মুলাই মেলা পুষ্টিগুণ। যকৃত ও পাকস্থলী পরিষ্কারে মুলার জুড়ি মেলা ভার। নিয়মিত তাই খাবার টেবিলে মুলা রাখতেই পারেন।

৪. সরিষা শাক 

বাজারে এখন চোখে পড়বে সরিষা শাক। শীতকালে অনেক বাড়িতেই সরষে শাকের বেশ কদর রয়েছে। সরষে শাক দিয়ে উপাদেয় বড়া হয়। সরিষা ওজন কমাতে সাহায্য করে। সরিষা শাকের ওজন কমাতে সহায়ক ভিটামিন সি ও আঁশ থাকে। এছাড়া এতে আয়রন, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে সরিষা কাজে লাগে।

৫. ফুলকপি 

ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে এর চমৎকার উৎস ফুলকপি। এতে আরো আছে ফলেট ও ভিটামিন বি সিক্স। প্রচুর পরিমাণে আসো জলীয় উপাদান সমৃদ্ধ হওয়ায় ফুলকপি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং তন্ত্রের ক্যান্সারের ঝুকি কমায়। 

৬. বাঁধাকপি 

বাঁধাকপিতে পাতার পরিমাণ বেশি বলে চর্বি বা কোলেস্টেরল প্রায়ই নেই। ১০০ গ্রাম বাঁধাকপিতে ২৫ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। আর ভিটামিন সি পাওয়া যায় প্রায় 36 মিলিগ্রাম। এসব যেটা আরো আছে ভিটামিন বি ফাইভ, বি সিক্স, বি সেভেন, বি ওয়ান ও নানা ধরনের ফটোকেমিক্যাল।

সিদ্ধ সবজি খাওয়ার উপকারিতা

শরীর সুস্থ রাখতে সবজি খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত জরুরী। কারণ সুস্থ শরীরের জন্য শাক সবজির কোন তুলনা। তবে আমরা সবজি খাওয়ার ক্ষেত্রে যে ভুলটি বেশি করে থাকি সেটি হলো সবচেয়ে রান্নার সময় বেশি বেশি তেল মশলা দিয়ে রান্না করি। এ ধরনের সবজি টেস্ট হয় ঠিকই কিন্তু কোন উপকারিতা পাওয়া যায় না। তাই সবজির উপকারিতা পেতে আমাদের উচিত সবজি সিদ্ধ করে খাওয়া। 

এতে যেমন সময়ও বাঁচে তেমন আমাদের স্বাস্থ্যের উপকার করে থাকে। কোন কোন সবজিতে এমন কিছু উপাদান থাকে যা সহজে হজম হতে পারে না। সে ক্ষেত্রে যদি সেই সবজিটিকে সঠিকভাবে সেদ্ধ করা হয়। তবে তার শরীরে সহজে হজম হয়। এছাড়া সিদ্ধ সবজি খেলে ওজন হ্রাস পায়, এসিডিটি কমে, কিডনি স্টোন প্রতিরোধ করা যায়। আলু যখন সিদ্ধ করা হয় তখন আলুর ক্যালরি কমে যায়। 

তাই যারা ওজন কমাতে চান তারা এটি খেতে পারেন। সবুজ ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে ও আইরন, পটাশিয়াম এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন। তাই এটি সেদ্ধ করে সুফ বানিয়ে খেলে আমাদের শরীরের সকল উপকারীর প্রয়োজনীয় উপকার গুলো পেয়ে যায় এতে শরীর সুস্থ থাকে। ভুট্টা ও গাজর সিদ্ধ করে খেলে তাতে থাকা উপকারী উপাদান আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। 

ফলে অসুখ বিসুখ দূরে থাকে। এছাড়া সেদ্ধ গাজর চোখের জন্য খুব ভালো। শুধু তাই নয় গাজর ত্বক উজ্জ্বলা মসৃণ করতে খুব উপকারী। মটরশুটি সিদ্ধ করে খেলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে তবে মটরশুঁটির ছয় মিনিটের বেশি সেদ্ধ করা ঠিক নয়। বিট সিদ্ধ খেলে তার শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। বিট বা গাজর ৩ মিনিটের বেশি সিদ্ধ করা যাবেনা। এই সিদ্ধ সবজি গুলো খেলে আপনি অনেক উপকার পাবেন।

সবুজ শাকসবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

সবুজ শাকসবজি ভিটামিন ও খনিজ লবনের ভালো উৎস। এটি অন্ত্র ও যকৃতের জন্য খুবই উপকারী। টাটকা সবুজ শাকসবজিতে ভিটামিন এ থাকে। যা দেহের বৃদ্ধি, দৃষ্টিশক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কচু শাক ও কলমি শাক থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন সি। ভিটামিন সি দাঁত ও মাড়ির জন্য খুবই উপকার। 

সবুজ-শাকসবজির-পুষ্টিগুণ

সবুজ শাকসবজি যেমন পুঁইশাক, পালং শাক, বাঁধাকপি, পটল ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে। শর্করা আমাদের দেহে শক্তি যোগায়। সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। খনিজ লবণের মধ্যেও ক্যালসিয়াম আমাদের দেহের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড়ের গঠনকে মজবুত করে এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। 

সবুজ শাকসবজি থেকে প্রচুর পরিমাণে লৌহ পাওয়া যায়। পালং শাক, কপি ও লেটস থেকে যে পরিমাণে লৌহ পাওয়া যায় তা আমাদের মানবদেহে চাহিদা ১৪ থেকে ৩৬ শতাংশ পূরণ করে থাকে। পটাশিয়াম ও সোডিয়ামে ভরপুর হাওয়ায় এই সবুজ শাকসবজি আমাদের শরীরের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যকৃত জন্য একটি বিশেষভাবে উপকারী সবজি ব্রকলি। নিয়মিত ব্রকলি খেলে যকৃত টিউমারের সমস্যা অনেকটা কমে যায়। কাঁচা এবং সিদ্ধ করে যে কোন ভাবে ব্রকলি খেলে দুটোতেই অনেক পুষ্টি পাওয়া যায়। এ ধরনের সবুজ শাকসবজির অনেক পুষ্টিকরণ ও উপকারিতা রয়েছে।

ভিটামিন সি জাতীয় শাকসবজি

আজকে আপনাদের জানাবো ভিটামিন সি জাতীয় সবজিগুলো কোনগুলো। যেগুলো আমরা সচরাচর প্রতিনিয়ত খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে এই সকল সবজিতে ভিটামিন সি রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন সবজিতে ভিটামিন সি রয়েছে।

১. কাঁচা মরিচ : কাঁচামরিচের প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে।

২. লাল মরিচ : লাল মরিচাও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। 

৩. ক্যাপসিকাম : ১২০ মিলিগ্রামে ক্যাপসিকামে প্রায় ৮০ গ্রাম ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রচুর পরিমাণে সহায়তা করে।

৪. ব্রকলি : প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রকলিতে ভিটামিন সি রয়েছে ৮৯. ২ মিলিগ্রাম।

৫. মটরশুটি : মটরশুটিতে প্রতি ১০০ গ্রামে ৪০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে।

৬. পাতাকপি : পাতাকপি তে রয়েছে প্রতি ১০০ গ্রামে ৩৬.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে।

৭. ফুলকপি : প্রতি ১০০ গ্রাম ফুলকপিতে ৪৮.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। 

৮. মুলা: এতে প্রতি ১০০ গ্রামে ১৪.৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়।

৯. লেটুস পাতা : এটি বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এদের প্রতি ১০০ গ্রামে ২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।

১০ . টমেটো : টমেটোতে প্রতি ১০০ গ্রামে ১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে।

১১. পালং শাক : পালং শাকের প্রতি ১০০ মিলিগ্রামে ২৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।

১২. ঢেঁড়স : প্রতি ১০০ মিলিগ্রাম ঢেঁড়সে ২৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। 

এইসব শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।

লেখকের মন্তব্য

শীতকালীন শাকসবজির পুষ্টিগুণা উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সাথে অনেক কথা বলেছি। সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। শীতকালীন কোন শাকসবজি পাওয়া যায় এর পুষ্টিগুণ কিভাবে খাবেন সবকিছু বিষয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি। আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হবেন। এবং জানতে পারবেন সকল বিষয়ে। এমন আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অল টপিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। মেনে কমেন্ট করুন।

comment url