বিভিন্ন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
বিভিন্ন ফলের পুষ্টিগুন ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইছেন তাহলে আপনি সঠিক পোস্টের মধ্যে এসেছেন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ফলমূল অনেক খাওয়া হয়ে থাকে। তবে এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকেই জানেনা।
তাই আপনাদের মাঝে এই পোস্টটি নিয়ে চলে আসলাম যেন আপনারা জানতে পারেন , বিভিন্ন ফলের পুষ্টি কেন ও উপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্র : বিভিন্ন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
১. আঙ্গুর ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
বিভিন্ন ফলের মধ্যে রয়েছে আঙ্গুর ফল যার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা অনেক রয়েছে। আঙ্গুর কিন্তু অত্যন্ত সুস্বাদু একটি ফল। সবার খুব প্রিয় সারা বছর আমাদের দেশে পাওয়া যায় এই আঙ্গুর ফল। আঙ্গুর কিন্তু শুধু মিষ্টি নয় আমাদের শরীরে এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা অনেক। আঙ্গুলের মধ্যে কিন্তু অনেক কম ক্যালরি পাওয়া যায়। অর্থাৎ আমরা মনে করি এইটা মিষ্টি বলে অনেক বেশি ক্যালরি চলে আসবে কিন্তু না। প্রতি ১০০ গ্রাম আঙ্গুরে শুধুমাত্র ৩২ কিলোক গ্যালারি পাই।
তবে এইটার জিআই ইনডেক্স একটু বেশি। আমাদের শরীরে চিনির মাত্রাটা বেড়ে যায়। আঙ্গুর ফল কোলেস্টেরল কমায়, বদ হজম দূর করে, আর শক্ত করে, ভুলে যাওয়া ঠেকায়, মাথা ব্যথায় উপকারি, চোখের স্বাস্থ্য উপকারী, স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, কিডনির জন্য উপকারী, ত্বকের সুরক্ষায় উপকারী, বয়সের ছাপে বাধা দেয়, চুলের জন্য বেশ উপকারী। আঙ্গুর ফলের ভেতরে এই ধরনের পুষ্টিকরণ ও উপকারিতা পাওয়া যায়।
২. পেয়ারার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
বিভিন্ন ফলের ভেতর পেয়ারার পুষ্টিগুণ অন্যতম। কথায় আছে দুটি আপেলের সমান পুষ্টিগুণ রয়েছে একটি পেয়ারায়। বীজে গুনে একেবারে পরিপূর্ণ পেয়ার। সব ফলের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ। সহজলভ্য হলেই মানুষ তার প্রতি আকর্ষণ হারায়। পেয়ারার ক্ষেত্রেও তার অন্যথায় হয় না। কিন্তু এই সহজলভ্য ফলে রয়েছে অনেক উপাদান ও অনেক উপকারিতা।
তাহলে চলুন দেখেনি সেগুলো কি কি? এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। এছাড়াও নির্দিষ্ট পরিমাণে ভিটামিন এ, বিটা ক্যারোটিন, থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, প্যানটোথনিক এসিড, ভিটামিন বি 6, ফোলেট, ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক ইত্যাদি খনিজ ও পদার্থ পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদে এই ফলকে অমৃত ফল বলা হয়েছে।
সোডিয়াম পটাশিয়াম এর মাত্রা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
পেয়ারায় সুনির্দিষ্ট পরিমাণে পটাশিয়াম থাকাই শরীরের পটাশিয়াম,পটাশিয়াম এর ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। এছাড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
হার্টের সমস্যা ও স্ট্রোক প্রতিহত করে
শরীরে ভেতরে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে পেয়ারা। পাশাপাশি ভালো কোলেস্টেরল হিসেবেও পরিচিত এইচ ডি এল এর মাত্রা বাড়িয়ে তোলে।
চোখের দৃষ্টি
পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকার ফলে দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন ছোটখাটো সমস্যা দূরে রাখে।
কোষ্টবদ্ধতা কমায়
এখন বয়স কালে বেশিরভাগ মানুষ কোষ বদ্ধতার সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। তবে শুধুমাত্র বেশি বয়সে নয় কম বয়সেও মানুষ এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। এ সমস্যা সমাধানে পাকা পেয়ারা বিশেষভাবে কার্যকারিতা ভূমিকা রাখে।
অপুষ্টি দূরীকরণ
আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে অপুষ্টি এখনো মস্ত বড় সমস্যা। তবে অপুষ্টি দূরীকরণের সমস্ত উপাদান পেয়ারার মধ্যে উপস্থিত। শরীর গঠনে পেয়ারে অত্যন্ত ভূমিকা রাখতে পারে।
তাই প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় একটি করে পেয়ারা রাখতে পারেন। পেয়ারা খেলে এই সমস্ত পুষ্টিগণ ও উপকারিতা মিলবে।
৩. ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
বিভিন্ন ধরনের ফলের ভিতরে রয়েছে ড্রাগন ফল এটি পুষ্টিগুনে ভরপুর। ফলটিতে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, ফাইবার, ক্যালরির, ম্যাগনেসিয়াম, আইরন, ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক অ্যাসিড, ওমেগা থ্রি এবং ওমেগা নাইন এসিড সহ আরো অনেক পুষ্টিগুণ।
- ড্রাগনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলিকে ফ্রিয়ের রেডিক্যালের হাত থেকে রক্ষা করে।
- এটি রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং প্রচুর ফাইবার থাকায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে আনে।
- ড্রাগন বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন -ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অ্যালজাইমার এবং পারকিনসন এর মতো ভয়ংকর ওদের হাত থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
- এটি শরীরে ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। ফলে হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে পরিপাকতন্ত্রকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- এর বিচি হার্ট ভালো রাখার পাশাপাশি রক্তচাপ ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- এছাড়া চোখের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে হার্ট ভালো রাখে, হাড় মজবুত করে ও ত্বককে স্বাস্থ্যেউজ্জ্বল করে।
তাই ফলের ভেতরে ড্রাগন ফলটি আপনি খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন। এটি আপনার জন্য খুব ভালো কাজ করবে। এবং তার পুষ্টিগুন অনেক।
৪. আতা ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
আতা ফলে রয়েছে অনেক পুষ্টিকর উপকারিতা। খেতে যেমন সুমিষ্ট এই দেশি ফলটি, তেমনি এতে ঠাসা আছে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদানে। আতা ফল খেলে মিলবে অনেক উপকার। আতা ফলে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ভিটামিন বি, বি6, এ, থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড মেলে আতায়।
আতাই থাকা ভিটামিন সি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের ফ্রি রেডিক্যাল থেকে মুক্তি দিতে পারে। ফ্রী রেডিক্যাল কোষের ক্ষতি, বার্ধক্য ও ক্যান্সারের জন্য দায়ী। আপনার যদি দুগ্ধজাত খাবারে এলার্জি থাকে, তবে আতা হতে পারে দুর্দান্ত বিকল্প। কারণ এতে এতই পুষ্টিগুণ রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে আতায়। নিয়মিত খেলে তার রক্তশূন্যতা থেকে দূরে থাকা যায়।
আরো পড়ুন : ফলমূল খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন
ভিটামিন বি ৬ এর চমৎকার উৎস আতা। আর ভিটামিন বি সিক্স সেরোটোনিন এবং ডোপামিন সহ নিউরোট্রান্সমিটার বা হ্যাপি হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে আতা খেলে মন ভালো থাকে। আদায় রয়েছে পলি ফ্যামিলি যৌগ যা ক্যান্সার ডায়াবেটিস সকল কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা এবং নিউরোডিজানারোটিভ অবস্থায় সহ কিছু দীর্ঘস্থায়ী অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। এছাড়াও চোখ ভালো রাখতে সহায়তা করে আতা। এছাড়াও আতাতে রয়েছে আরো অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।
৫. ডালিম ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
ডালিম ফলের অনেক পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা রয়েছে। ডালিম পুষ্টিগুনে ভরপুর, প্রতি ১০০ গ্রাম ডালিমে ৭৮ ভাগ পানি, ১.৫ ভাগ আমিষ, ০.১ ভাগ স্নেহ, ৫.১ ভাগ আঁশ, ১৪.৫ ভাগ শর্করা, ০.৭ ভাগ খনিজ ও ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৪ মিলিগ্রাম অক্সিলাইডিক অ্যাসিড, ৭০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ০.৩ মিলিগ্রাম রায়গোফ্লবিক, ০.৩ মিলিগ্রাম নায়াসিন, ১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ইত্যাদি থাকে।
ডালিম খেলে রক্তে অনুচক্রিকা বাড়ে, স্মৃতিশক্তি বাড়ে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। সুস্থ থাকার জন্য তাই রোজ ডালিম খেতে পারেন। ডালিমে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে। ডালিম ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে এটি। নিয়মিত ডালিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে স্তন ক্যান্সারের হাত থেকে মুক্তি মিলবে।
ডালিম ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। এছাড়া এটি ফাঙ্গাস ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ডালিমে থাকা বহু পুষ্টি উপাদান দেহের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াই। এতে অ্যালিভিয়া ও রক্তের নানা সমস্যা দুর হয়। ডালিম স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। ভুলে যাওয়ার প্রবণতা কমাতে ডালিম খেতে পারেন। ডালিম দেহের খারাপ করেস্টল কমায় এতে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। এবং হৃদ রোগের ঝুকি কমে। ডালিম খাওয়ার পরে এ ধরনের পুষ্টিগুণ উপকারিতা মিলতে পারে। তাই প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় ডালিম রাখতে পারেন।
লেখকের মন্তব্য
বিভিন্ন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সাথে অনেক কথা বললাম। আপনারা হয়তো অনেক ফলই খান কিন্তু সেগুলোর কি পুষ্টি তার উপকারিতা কি সেগুলো কিছুই জানেনা। তাই আপনাদেরকে সকল বিষয় বিস্তারিত জানানোর জন্য আজকের এই পোস্টটি করলাম। এই পোস্টটি সম্পন্ন করলে আপনি সকল বিষয়ে জানতে পারবেন। আশা করি আজকের এই পোষ্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হবেন। এমন আরো নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করবেন।
অল টপিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। মেনে কমেন্ট করুন।
comment url