চা চাষের পদ্ধতি

চা চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইছেন তাহলে আপনি সঠিক প্রশ্নের মধ্যে এসেছেন। বর্তমানে অনেক নতুন চাষী রয়েছে যারা সঠিক নিয়ম কানুন জানেনা। তাই এই পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়লে আপনি জানতে পারবেন 

চা-চাষের-পদ্ধতি

চা চাষের সকল নিয়মকানুন সম্পর্কে। চারা থেকে কিভাবে বড় হওয়া পর্যন্ত পরিচর্যা করতে হবে সকল বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন কথা না বাড়ি আলোচনা শুরু করা যাক। 

পোস্ট সূচিপত্র : চা চাষের পদ্ধতি

১. চা চাষ কি কিভাবে করবেন

চা চাষের পদ্ধতি অনেকেই সঠিকভাবে জানে না। চা মৌসুমী অঞ্চলের পার্বত্য ও উচ্চ ভূমির ফসল। এক প্রকার চিরহরিৎ বৃক্ষের পাতা শুকিয়ে চা প্রস্তুত করা হয়। চীন দেশেই চায়ের আদি জন্মভূমি এবং সেখানে চা প্রথম পানীয় বা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে এটি বিশ্বে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পানীয়রূপে পণ্য হয়ে থাকে। চায়ের বৈজ্ঞানিক নাম থিয়া সাইনেন সিস।

২. চা চাষের পদ্ধতি

চা চাষের পদ্ধতি প্রধানত একান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলের ফসল হলেও উপকান্ত্রিয় জলবায়ু অঞ্চলেও এটি কিছু কিছু কাজ করা হয়। প্রথম অবস্থায় পাহাড়ের ঢালু জমি পরিষ্কার করা হয়। চারা গুলো যখন বিষ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয় তখন সেগুলো চা বাগানে সারিবদ্ধ ভাবে রোপন করা হয়। সাধারণত ১.৫ মিটার পরপর চারা গুলো রোপন করা হয়। 

এরপর গাছগুলোর বিধির জন্য সার ও পানি শেষের ব্যবস্থা করতে হয়। এভাবে দুই থেকে তিন বছর পরিচর্যার পর গাছগুলো পাতা সংগ্রহের উপযোগী হয়। কিন্তু গাছগুলো পাঁচ বছর না হওয়া পর্যন্ত পরিপূর্ণতা লাভ করে না। একটি গাছ ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত উৎপাদন উপযোগী থাকে। তারপর নতুন গাছ রোপন করতে হয়।

৩. চা চাষের জন্য চারা নির্বাচন

চা চাষের পদ্ধতির পাশাপাশি আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে, উপযুক্ত চারা নির্বাচন করা। দুই প্রকারের চা গাছ দেখতে পাওয়া যায় যেমন আসাম জাতীয় এবং চীন জাতীয়। আসাম জাতীয় চা গাছ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অধিক চাষ করা হয়। এ ধরনের চা গাছ বেশ বড় এবং বহু পাতাযুক্ত হয় বলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার উপযোগী হয়ে ওঠে। চীন জাতীয় চা গাছ আকারে ছোট এতে পাতার সংখ্যাও কম থাকে।

চা-চাষের-পদ্ধতি

এ গাছ না ছাটলেও পাতা তোলার মতো উচ্চতা সম্পন্ন থাকে। কিন্তু আসাম জাতীয় গাছ ৬ মিটার ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় ফলে পাতা পাবার এবং তোলার জন্য গাছগুলোকে ১.২ মিটারের চার ফুট অর্ধেক বড় হতে দেয়া হয় না। ফলে গাছগুলোর একটি ঝোপে পরিণত হয়। চীন জাতীয় গাছের পাতা সাধ ও গন্ধের জন্য বিখ্যাত এবং আসাম জাতীয় গাছের পাতা রংয়ের জন্য বিখ্যাত। দুই ধরনের চা পাতার উন্নত সংমিশ্রণের ওপরেই এর গুনাগুন নির্ভর করে। 

আরো পড়ুন : কোন মাটিতে কোন ফসল ভালো হয়


সুতরাং চা মিশ্রণ একটি নিপুণ তার কাজ। চা মিশ্রণ কাজটি অত্যন্ত কঠিন। এর ওপরেই চায়ের গুনাগুন নির্ভর করে। তাই এটি অভিজ্ঞ ব্যক্তি দ্বারা সম্পন্ন করা হয়। এভাবে চা মিশ্রণের নিপুনতা লাভের জন্য লিপটন, ব্রকবগু প্রভৃতি চা ব্যবসায়ী হিসেবে বিশেষ খেতে লাভ করেছে।

৪. চা সংগ্রহ পদ্ধতি

চা চাষের পদ্ধতির পাশাপাশি চা সংগ্রহের পদ্ধতি জানা অতি গুরুত্বপূর্ণ। চা গাছ হতে পাতা সংগ্রহ করতে যথেষ্ট নয় পণ্যের প্রয়োজন। কারণ দুটি পাতাও একটি কুড়ি একসঙ্গে তে না পারলে চা এর উৎকর্ষ নষ্ট হয়ে যায়। চীন ও জাপানে বছরে তিনবার চা পাতা সংগ্রহ করা হয়। তবে ভারত বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় খুব ঘনঘন পাতা সংগ্রহ করা যায়। বছরে গড়ে ষোল হতে বিশ বার পর্যন্ত চা পাতা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। চিনে বছরে গড়ে তিনবার পাতা তোলা হয়।

৫. চা এর ব্যবহার

চা বর্তমান জগতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পানীয়। অন্যান্য পানি ও অপেক্ষায় এর দাম কম বলে অধিকাংশ দেশের লোক এই পানীয় বেশি ব্যবহার করে না। চা এর বীজ হতে যে তেল পাওয়া যায় তা সাবান প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ক্যাফেইন নামক এক পোকার ক্ষার পদার্থ যা হতে প্রস্তুত হয়। বর্তমানে সকল অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আড্ডার আসরে জানা হলে ঠিক জমে ওঠে না। প্রায় সকল জায়গায় চায়ের ব্যবহার রয়েছে যেমন দুধ চা, রং চা, আদা চা ইত্যাদি খাওয়া হয়ে থাকে। তবে কিছু মানুষ রয়েছে যারা এটিকে নিয়মিত পান করার অভ্যাস তৈরি করে ফেলেছে।

৬. চা এর শ্রেণীবিভাগ

চা চাষের পদ্ধতি জানার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে, চা এর কতগুলো এবং কি কি শ্রেণীবিভাগ রয়েছে। প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া অনুসারে চা কে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন 

  • কালো চা 
  • সবুজ চা 
  • ইষ্টক চা 
  • ওলং চা 
  • প্যারাগুয়ে চা 

কালো চা 

গাছ হতে পাতা তুলে প্রথমে তা রোদে শুকিয়ে গোড়া করা হয় এবং ২/৩ দিন বন্ধ ঘরে গুদামজাত করে রাখা হয়। এরপর উক্ত গোড়া চা কে আগুনে ভেজে চালুনির দ্বারা গুরাঁচা এবং পাতা চা পৃথক করা হয়। এ রুপের চা প্রস্তুুত করলে চায়ের রঙ কালো হয়। একে কালো চা বলা হয়। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, চীন প্রভৃতি দেশ অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং ইউরোপ ও আমেরিকা বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য কালো চা প্রস্তুত করে থাকে। 

সবুজ চা 

চায়ের পাতা প্রথমে গরম পানিতে সিদ্ধ করে রৌদ্রে শুকিয়ে যে চাপ প্রস্তুত করা হয় তাকে সবুজ চা বলা হয়। এরূপ চা চীন, জাপান ও ফরমোজা বেশি প্রস্তুত করে থাকে। 

ইষ্টক চা 

বর্তমানে রাশিয়া প্রভৃতি দেশে গোরা চায়ের সাথে মসলা, ভারতের মগু মিশ্রিত করে তা চাপ দিয়ে ইষ্টকারে জমানো হলে তাকে ইষ্টক চা বলা হয়ে থাকে 

ওলোং চা 

তাইওয়ানের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে চা বাগানের চা কে খানিকটা গজানো প্রক্রিয়ায় উন্নত মানের চায়ে পরিণত করা হয়। এ চা এর প্রায় সবই আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। 

প্যারাগুয়ে চা 

প্যারাগুয়ে ও ব্রাজিলের অরণ্য থেকে একপ্রকার বর্ণ চায়ের পাতা সংগ্রহ করে তা আগুনে পুড়ে গোড়া করা হয়। এ জাতীয় চা কেই প্যারাগুয়ে যা বলে।

লেখকের মন্তব্য 

চা চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাদের সাথে এই পোস্টে সকল বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর এই পোস্টটি পড়ে পেয়ে গেছেন। সকল প্রকার তথ্যভিত্তিক পোস্ট পেতে অল টপিক আইটিতে নিয়মিত ভিজিট করবেন। অল টপিক আইটি নির্ভুল এবং সঠিক তথ্য দিয়ে থাকে ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অল টপিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। মেনে কমেন্ট করুন।

comment url