ঈমান ঠিক রাখার উপায়

ঈমান ঠিক রাখার উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আপনি সঠিক জায়গাতে এসেছেন। আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা ঈমান কিভাবে ঠিক রাখব কিভাবে ঈমান বৃদ্ধি করব বা ঈমান ভঙ্গের অনেকগুলো কারণ আছে সেই সম্পর্কে। আজকে আপনাদের মাঝে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করবো।

ঈমান-ঠিক-রাখার-উপায়

যারা জানেন না তাদের জন্য আজকের এই পোস্টটি করা। সম্পূর্ণ পোস্টটি করতে থাকো তাহলে আপনি সকল বিষয় বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক ঈমান ঠিক রাখার উপায় গুলো কি? 

পোস্ট সূচিপত্র : ঈমান ঠিক রাখার উপায়

ঈমান ঠিক রাখার উপায়

ঈমান হলো আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাই আমাদের সবার মাঝে ঈমান থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে এই ফেতনা যুগে চতুর্দিক থেকে ঈমানের উপরে হামলা আসছে। তাই প্রতিনিয়ত ঈমান ঠিক রাখা অনেক কঠিন একটি বিষয় নিয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈমান ঠিক রাখার দোয়া আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মুসলমান জাতি। বর্তমান যুগের ঈমান ঠিক রাখা খুবই কঠিন। 

আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কারো ঈমান ঠিক রাখা সম্ভব না। তাই প্রতিদিন আল্লাহর কাছে আমাদের ঈমান ঠিক রাখার দোয়া করতে হবে। নিজের ঈমান ঠিক রাখুন এবং অন্যকে বোঝান যে নিজের ভেতরে ঈমানটা থাকা খুব জরুরী। কোন খারাপ কাজের সাথে বা কোন বেয়াইনের কাজের সাথে যুক্ত হবেন না। নিজের ঈমান সবসময় ঠিক রাখবেন কোন ধরনের খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবেন। 

নিজেকে সে সমস্ত মানুষদের থেকে আড়ালে রাখবেন যাদের নিজের কোন ঈমান নেই। কারো ভিতরে কত পরিমাণ ঈমান থাকলে সে কখনো কোনো খারাপ কাজ করতে পারবে না। এবং অন্য মানুষকেও সেটি করা থেকে বাধা দেবে। তাই আমাদের সকলের উচিত নিজের ঈমান ঠিক রাখা। এবং সেই ঈমানটাকে ধরে রাখা।

ঈমান বৃদ্ধি করার উপায়

ঈমান আমাদেরকে ঠিক রাখতে হবে এবং তার সাথে ঈমানকে আরও বৃদ্ধি করতে হবে। ঈমান মুমিনের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। একজন মুমিন ঈমানের বদলে দুনিয়ার জীবনে যেমন মহান আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করেন, তেমনভাবে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনেও চির সুখের জান্নাত লাভ করবেন। কিন্তু বড় দুঃখের বিষয় এই যে, আমাদের ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবনে আমরা ইসলামের অন্যান্য আমলের বিষয়ে যতটা সচেতন ঈমানের বিষয়ে ততটাই অসচেতন। 

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও ঈমান শিক্ষার বিষয়টি একেবারেই অবহেলিত। আমাদের গোটা জীবনটাই হয়ে গেছে দুনিয়ামুখী। আমরা একমাত্র আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য আমল করবো। যা আল্লাহর কাছে আমল কবুলের পূর্ণ শর্ত এবং এটা আমাদের ঈমান বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। আমাদের ঈমান বৃদ্ধির জন্য ইসলামের ফরজ বিধান যথাযথভাবে পালন করতে হবে। 

আরো পড়ুন : ইসলামে ১৩০ ফরজ কি কি?


পাশাপাশি কবিরা গুনাহ পরিত্যাগ করতে হবে। কেননা রাসূল সাঃ বলেছেন কোন জিনাকারী যখন জিনা করে তখন তার ঈমান থাকে না। আমাদের বেশি বেশি নিকদার লোকদের সাহচর্য গ্রহণ করতে হবে। যা আমাদের বেশি বেশি নেক আমাদের দিকে ধার্জিত করবে ও গুনাহ থেকে বিরত থাটতে সাহায্য করবে। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদারগণ আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো। আমাদের বেশি বেশি নেক আমলের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যে যত বেশি নেক আমল করবে তার ঈমান তত বেশি বৃদ্ধি পাবে।

ঈমানের দুর্বলতা দূর করার ১০টি আমল

ঈমান ঠিক রাখার সাথে সাথে ঈমানের দুর্বলতাও দূর করতে হবে। বহু মুসলমান ভাইদের অবস্থা এমন যে ঈমান ও আমলের প্রতি কোন গুরুত্ব নেই। নামাজ পড়তে ইচ্ছা করে না, ইচ্ছে থাকলেও সুযোগ হয় না। অথবা নিয়মিত ইবাদত করা সম্ভব হয় না। এসব কিছু ঈমানী দুর্বলতার পরিচয়। ঈমানের দুর্বলতা দূর করার ১০টি উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

ঈমান-ঠিক-রাখার-উপায়

১. এমন লোকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন, যাদের সংস্পর্শে গেলে আমল বেড়ে যায়। যারা অন্যকে আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন। 

২. বেশি পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করুন বা শ্রবণ করুন।

৩. নবীদের সিরাত, সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়ুন। কেননা মহান আল্লাহ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম ও সাহাবায়ে কেরামের অন্তর প্রশান্ত করার জন্য পবিত্র কোরআনে নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। আর তিনি সাহাবায়ে কেরামের ঈমানকে আমাদের ঈমানের জন্য আদর্শ বানিয়েছেন। এ মর্মে আল্লাহ বলেন, মানুষ যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো। 

৪. অধিক হারে আল্লাহর জিকির করুন। কেননা দুর্বল ঈমানের সুস্থতার জন্য জিকির খুবই উপকারী। 

৫. ইসলামের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানুন। কেননা ইসলামের সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য যোগাযোগে মানুষকে মুগ্ধ করেছে। 

৬. প্রকৃতিতে আল্লাহর নিদর্শনগুলি নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। 

৭. সবকিছু চেয়ে আল্লাহ ও তার রাসূলকে প্রাধান্য দিন। 

৮. আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার সামান্যতার কথা চিন্তা করুন। এর দ্বারা ঈমান বৃদ্ধি পাবে। 

৯. আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা ঠিক রাখুন। অর্থাৎ বন্ধুত্ব ও শত্রুতা উভয় আল্লাহ জন্য সুতরাং মমিনদের সঙ্গে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব রাখুন। আর অবিশ্বাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করুন। কেননা দ্বীনের শত্রুত সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে।

১০. ঈমানী দুর্বলতার চিকিৎসায় বিনয় ও লজ্জাশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

দুর্বল ঈমানের লক্ষণ

আমাদের ঈমান কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে। এ সম্পর্কে রাসূল সাঃ বলেন আমাদের প্রত্যেকের ঈমান ক্রমশ জীর্ণ হতে থাকে যেভাবে সাউব, (এক ধরনের পোশাক) জীর্ণ হয়ে যায়। দুর্বল ঈমানের ১০টি লক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

১. পাপ করা সত্ত্বেও মনে পাপবোধ সৃষ্টি না হওয়া।

২. কোরআন তেলাওয়াতের ব্যাপারে অনিহা এবং অনাগ্রহ বোধ করা। 

৩. ভালো কাজে আলসেমি বোধ হওয়া বা ঢিলেমি করা। যেমন নির্ধারিত সময়ের সালাত আদায় না করা।

৪. রাসুল সাঃ এর সুন্নাহ অনুশীলনের ব্যাপারে অবহেলা।

৫. খামখেয়ালী মেজাজ। যেমন সামান্য বিষয়েই তুলকালামি করে ফেলা বামে যা সব সময় খিটখিটে করে থাকা। 

৬. কুরআনের তেলাওয়াত শুনে বিশ্বাস করে বিশেষ করে পাপের জন্য শাস্তি বা সৎ কাজের জন্য পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে এমন আয়াত গুলো শুনেও হৃদয়ে কোনরকমে প্রমাণ বা অনুভূতি না হওয়া। 

৭. আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের স্মরণ থেকে বিমুখ হওয়া এবং তাকে স্মরণ করা কঠিন মনে হওয়া।

৮. ধন সম্পদ, প্রভাব প্রতিপত্তি, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি এইসব কিছুর পিছনে সারাক্ষণ ছুটে চলা।

৯. ক্রমাগত মানসিক দোল্যতার পাশাপাশি আর্থিক কৃপণতা বাড়তে থাকা। ধনসম্পদ আঁকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা। 

১০. নিজে না করে অন্যকে ভালো কাজের আদেশ দেওয়া।

ঈমান ভঙ্গের কারণ কি

ঈমান ঠিক রাখতে হবে এবং তার সাথে জানতে হবে ঈমান ভঙ্গের কারণ গুলো। আমরা নামাজ ভঙ্গের কারণ জানি, রোজা ভঙ্গের কারণ জানি, ওযু ভঙ্গের কারণ জানি, কিন্তু ঈমান ভঙ্গের কারণ জানিনা। ঈমান যদি না ভাঙ্গে তাহলে আপনি জোড়া লাগাবেন কিভাবে যদি নাই জানেন ঈমান ভঙ্গের কারণগুলো আমরা অনেকেই জানিনা। চলো তাহলে আপনাদেরকে জানাই ঈমান ভঙ্গের কারণগুলো কি? 

১. শিরকে আকবর করা। 

২. আল্লাহর সাথে বান্দার কোন মাধ্যম বানানো।

৩. কাফির মুশরিকের মতবাদকে সঠিক মনে করা। 

৪. রাসূল সাঃ আনা আদর্শ ছাড়া অন্য কোনো আদর্শকে উত্তম মনে না করা। 

৫. শরীয়তের কোন অংশকে অপছন্দ বা অস্বীকার করা। 

৬. শরীয়তের কোন সওয়াব বাসস্থির বিধান নিয়ে ঠাট্টা করা। 

৭. জাদু বা তন্ত্র মন্ত্রের প্রয়োগে কিছু করার চেষ্টা।

৮. মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফির বা মুশরিকদের সাহায্য করে। 

৯. ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবন বিধান গ্রহণ বা সেটাকে উত্তম ভাবা।

১০. আল্লাহর মনোনীত দিন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া।

লেখকের মন্তব্য 

ঈমান ঠিক রাখার উপায় সম্পর্কে আপনাদের সাথে এই পোস্টে সকল বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর এই পোস্টটি পড়ে পেয়ে গেছেন। সকল প্রকার তথ্যভিত্তিক পোস্ট পেতে অল টপিক আইটিতে নিয়মিত ভিজিট করবেন। অল টপিক আইটি নির্ভুল এবং সঠিক তথ্য দিয়ে থাকে ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অল টপিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। মেনে কমেন্ট করুন।

comment url