পরিবেশ দূষণের ১০ টি কারণ

পরিবেশ দূষণের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। আমরা অনেকেই সেই কারণগুলো জানিনা। আগে জানতে হবে পরিবেশ কি পরিবেশ কাকে বলে দূষণ কাকে বলে সকল বিষয়ে। নিজের সকল বিষয় বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করবো। 

পরিবেশ-দূষণের-১০-টি-কারণ

সবকিছু জানতে হবে এবং পরিবেশটাকে দূষণের হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক পরিবেশ দূষণের কারণ গুলো কি?

পোস্ট সূচিপত্র : পরিবেশ দূষণের ১০ টি কারণ

‌পরিবেশ কাকে বলে

আমাদের আশেপাশে যা কিছু আছে তাই নিয়েই আমাদের পরিবেশ। যেমন মাটি, পানি, বায়ু, গাছপালা, জীব জন্তু, ঘরবাড়ি, সূর্যের আলো ইত্যাদি। এই সব কিছু পরিবেশের কেন্দ্রবিন্দু। পরিবেশ সম্পর্কে সংজ্ঞা দিতে গিয়ে মনোবিজ্ঞানী বোরিং, লংফিন্ড এবং ওয়েন্ড বলেছেন, জিন ব্যতীত ব্যক্তির উপরে যা কিছুর প্রভাব দেখা যায় তাই হলো পরিবেশ। আর এই পরিবেশকে ঘিরেই আমাদের চলমান প্রক্রিয়া। পরিবেশ দুই ধরনের ১. প্রাকৃতিক পরিবেশ ২. সামাজিক পরিবেশ। 

প্রাকৃতিক পরিবেশ  

আমাদের চারপাশের সকল উপাদান নিয়েই প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশের সকল উপাদান মহান সৃষ্টিকর্তা তৈরি। তিনি আমাদের বেঁচে থাকার তাগিদে প্রাকৃতিক কিছু যা কিছু আছে সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান যেমন মাটি, পানি, বায়ু, মানুষ, গাছপালা, পাহাড়, সমুদ্র ইত্যাদি।

সামাজিক পরিবেশ 

মানুষের তৈরি যা কিছু আছে সেই নিয়ে সামাজিক পরিবেশ। এ পরিবেশ তৈরিতে মানুষের অনেক অবদান রয়েছে। জীবনধারণের সুবিধার জন্য মানুষ এই পরিবেশ তৈরি করে থাকে। যেমন ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, নৌকা, বাস, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি। এই সকল কিছু নিয়ে সামাজিক পরিবেশ। আমরা যেহেতু পরিবেশের একটি অঙ্গ তাই বেঁচে থাকার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের সকলের উচিত পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা। এতে পরিবেশ হবে সুস্থ জীবন যাপনের উপযোগী এবং স্বাস্থ্যকর।

পরিবেশ দূষণ কি

পরিবেশ দূষণের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। পরিবেশ মানব সভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সভ্যতার ক্রমবিকাশ থেকে মানুষ ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছে তার পরিবেশ। মানুষের রচিত পরিবেশ তারাই সভ্যতার বিবর্তনের ফসল। পরিবেশই প্রাণের ধারক, জীবনী শক্তির যোগানদার। কিন্তু এই পরিবেশ আজ নানা কারণে দূষিত হচ্ছে। সারা পৃথিবী জুড়ে ঘনিয়ে আসছে পরিবেশ সংকট। 

মানুষের সৃষ্ট যন্ত্রসভ্যতার গোড়াপত্তন থেকেই চলেছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মানুষের নির্মম কুঠারাঘাত। ফলে প্রাকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। মারাত্মক পানি দূষণ ও বায়ু দূষণ নিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আজ উদ্বিগ্ন। এর থেকে মুক্তির বিষয় নিয়ে চলে আসছে নানা গবেষণা। এ ব্যাপারে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতিসংঘ ৫ জুনকে ঘোষণা করেছে `বিশ্ব পরিবেশ দিবস। 

আরো পড়ুন : দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করার উপায় জানুন


আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তাই নিয়েই আমাদের পরিবেশ। আর পরিবেশ দূষণ হলো মানুষের কর্মকান্ডের ফলে পরিবেশের উপাদানে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন। পরিবেশ দূষণ হলো : বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, মাটি দূষণ, শব্দ দূষণ, তেজস্ক্রিয় দূষণ, খাদ্য দূষণ, ওজোন গ্যাস বৃদ্ধি ও গ্রিন হাউস ইফেক্ট ইত্যাদি। প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দুই রকমেরই দূষণ দেখা যায়।

পরিবেশ দূষণের ১০টি কারণ সমূহ

পরিবেশ দূষণের অনেকগুলো কারণ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম কারণগুলো হলো :

পরিবেশ-দূষণের-১০-টি-কারণ

১. জনসংখ্যা বৃদ্ধি 

২. অপরিকল্পিত নগরায়ন 

৩. বনভূমির অপরিকল্পিত ব্যবহার 

৪. প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার 

৫. কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ 

৬. বনভূমি উজার 

৭. গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া 

৮. ওজোন স্তরের ক্রমাগনিত 

৯. এসিড বৃষ্টি 

১০. অপরিকল্পিত গৃহ নির্মাণ

উক্ত কারণগুলোর মধ্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাহিদার চাপ পড়েছে প্রচন্ডভাবে। ভূমিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে চাষের তীব্রতা, কৃত্রিম সার ও কীটনাশক এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বিনষ্ট হচ্ছে চাষযোগ্য ভূমির সঞ্জীবনী শক্তি। অন্যদিকে নতুন নতুন বসতি আর কল কারখানা স্থাপনের মধ্য দিয়ে ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে চাষযোগ্য ভূমি ও বনভূমি। 

কলকারখানার কালো ধোয়া ও বিষাক্ত গ্যাস নির্গমনের পাশাপাশি রাসায়নিক শিল্প কারখানা থেকে প্রতিদিন নদী, সমুদ্রে মিশে বিপুল পরিমাণে বিষাক্ত বর্জ্যদ্রব্য। মাটি, পানি, বাতাস এবং আমাদের চারপাশের উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের উপর বিষক্রিয়ার প্রভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ হয়ে উঠেছে ভারসাম্যহীন, দূষিত ও বাস অযোগ্য। এই সকল কারণগুলো পরিবেশ দূষণের কারণ সমূহ।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

পরিবেশ দূষণের অনেক কারণ রয়েছে এবং তার প্রতিকার করার ও উপায় রয়েছে। পরিবেশ যখন নেতিবাচক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রভাবিত হয় তখনই তাকে পরিবেশ দূষণ বলে। পরিবেশ দূষণের মূল কারণ হলো মানুষের লোভ, স্বার্থ ও বুদ্ধিহীনতা যার ফলে সে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করে চলেছে পৃথিবীর ভারসাম্য ও শৃঙ্খলা। পরিবেশ দূষণকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। 

যেমন মাটি দূষণ, পানি দূষণ, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ ও মনস্তান্ত্রিক দূষণ। আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো বায়ু যা ছাড়া মানুষ এক মিনিটও বাঁচতে পারে না। বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ হলো নিউক্লিয় আলোচনা, কয়লা পরিয়া co2 বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া, কলকারখানার দূষিত গ্যাস, যানবাহনের জ্বালানোর পোড়া বাতাসে মিশে বায়ু দূষিত হচ্ছে। 

দূষণের ফলে মানুষের শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারের মত দূরারোগ্য রোগ দেখা দিচ্ছে। পরিবেশ দূষণ আজ সারা পৃথিবীর একটি বিরাট সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। সব রকম সমস্যা থেকে আমাদেরকে একমাত্র মুক্তি দিতে পারে উদ্ভিদ। তাই বেশি করে গাছ লাগাতে হবে এবং গাছ সংরক্ষণ করতে হবে। তাহলে বাতাসে co2 ও 02 এর ভারসাম্য বজায় থাকবে। 

কলকারখানা থেকে ২০০ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের ব্যবস্থা নিতে হবে। কল কারখানার নোংরা জল বা দূষিত জল যেন নদীতে নাম মেশে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শব্দ দূষণ কমানোর জন্য শব্দ নিরোধক যন্ত্রের ওপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। কৃষি জমিতে সার, কীটনাশক ব্যবহার করা কমিয়ে মাটি দূষণকে রোধ করতে হবে। যানবাহনে পেট্রোল-ডিজেলের মত জ্বালানি না পুড়িয়ে ব্যাটারি জনিত গাড়ি ব্যবহার করলে বায়ু দূষণ কমবে।

মাটি দূষণের কারণ

প্রকৃতি সবচাইতে বড় দান হলো মাটি। পৃথিবীর তিনভাগের ভিতর এক ভাগ হচ্ছে মাটি। মাটি হলো জীবনধারণের ও সমস্ত জীব কুলের আবাসস্থল। তার পাশাপাশি পানিপুল এই মাটি থেকে তার খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। বর্তমানে নানা কারণে মাটি দূষিত হয়ে থাকে। কারখানার দূষিত বর্জ্য পদার্থ, আবর্জনা, প্লাস্টিক, রাসায়নিক সার, কীটনাশক এইসব নানা কারণে মাটির সাথে মিশেন মাটির গুণার্থ নষ্ট করে দেয়। উর্বলতা ও গুণগত মান হারালেই মাটি দূষিত হয়ে পড়ে। 

জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপেও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাটির ক্ষয় ও দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসংখ্যা মাটি দূষণের অন্যতম কারণ। এছাড়া অতিরিক্ত জনসংখ্যার বাসস্থান নির্মাণের জন্য বনাঞ্চন নষ্ট করা হচ্ছে ফলে মাটির ক্ষয় হয়। মাটি দূষণ ও বৃদ্ধি পায়। জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারণে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা ও বৃদ্ধি পায়। বেশি ব্যবহারের জন্য কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় তার ফলে মাটিকে আরো বেশি দূষিত করে ফেলছে। বারবার একই জমিতে চাষ করার ফলে মাটিতে জৈব পদার্থের অভাব ঘটার ফলে মাটির গুণগতমান নষ্ট হয়ে পড়ছে। এই কারণে মাটি দূষণ বেড়েই চলেছে।

পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব

বিভিন্ন ক্ষতিকর ও বিষাক্ত পদার্থ পরিবেশে মিশলে পরিবেশ দূষিত হয়। পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষ, জীবজন্তু ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। যেমন :

১. দূষণের কারণে মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যেমন - ক্যান্সার, শ্বাস জনিত রোগ, পানিবাহিত রোগ, ত্বকের রোগ ইত্যাদি।

২. জীবজন্তুর আবাসস্থল নষ্ট হয় 

৩. খাদ্য শৃংখল ধ্বংস হয় 

৪. পরিবেশ থেকে অনেক জীব বিলুপ্ত হয় 

৫. পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পায় 

৬. হিমবাহ বলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়

এছাড়াও পরিবেশ দূষণ স্বাস্থ্যের ওপরও অনেকভাবে প্রভাব ফেলে। এছাড়া পরিবেশ দূষণের আরো অনেক প্রভাব রয়েছে। এই সকল কারণে পরিবেশ দূষণ হয়।

লেখকের মন্তব্য

পরিবেশ দূষণের ১০টি কারণ সম্পর্কে আপনাদের সাথে অনেক কথা বলেছি। আগে জানুন পরিবেশ কাকে বলে দূষণ কাকে বলে। এবং প্রতিকার করবেন কিভাবে সকল বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। পরিবেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। পরিবেশকে সুস্থ না রাখলে ভালো না রাখলে আমরা নিজেরাও কখনো ভালো থাকতে পারবো না। তাই পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে ভালো রাখতে হবে। আশা করি আজকের পোস্টটি পড়ে উপকৃত হবেন। এমন আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অল টপিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। মেনে কমেন্ট করুন।

comment url