গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন, তাহলে আপনি সঠিক জায়গাতে এসেছেন। আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের মাঝে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করবো। গাজর খাওয়ার উপকারিতা, গাজর খাওয়ার নিয়ম, আরো অন্যান্য বিষয়গুলো জানানোর চেষ্টা করবো।
এ ছাড়া গাজর খাওয়া যেমন উপকারিতা আছে তার তেমন অপকারিতা ও রয়েছে। এই সকল বিষয়ে আলোচনা করবো। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে আপনি সকল বিষয় জানতে পারবেন। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।
পোস্ট সূচিপত্র : গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
গাজর খাওয়ার উপকারিতা
গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। শীতের সবজি হিসেবে গাজর অন্যতম। গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ও আঁশ সমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি। এই সবজিটিতে আছে বিটা ক্যারোটিন যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কাঁচা গাজর সালাদ বা জুস ও তরকারিতেও খাওয়া যায়। চোখ, ত্বক, চুল ও শরীরের নানা অঙ্গের জন্য গাজরের উপকারিতা বলে শেষ করার মত নয়।
গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যার শরীরে কোলেজন তৈরি করতে সাহায্য করে। ফলে শরীরের কোথাও কোনো ক্ষত হলে তা দ্রুত ভালো হয়ে যায়। এছাড়াও গজল শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে অনেক গুণ। গাজর আসে পরিপূর্ণ। গবেষণা অনুযায়ী ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা বেশি পরিমাণে ফাইবার খেলে গ্লুকোজ, মেটাবলিজম উন্নত লাভ করে।
তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের গাজর খাওয়া আবশ্যক। গর্ভাবস্থায় গাজরের রস পান করা খুবই উপকারী। এতে শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর হয়। যেসব মা শিশুকে দুধ পান করান তাদের নিয়মিত গাজরের রস পান করা উচিত। লিভারের রোগে আক্রান্ত রোগীরা গাজরের রস গাজরের সুপ পান করলে উপকার হয়। গাজরের উপকারী উপাদান গুলো ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধে অংশ নেয়।
এছাড়া শ্বাসনালীর প্রদাহ ভালো করে। গাজর দাঁতের সুরক্ষা দেয়। দাঁত পরিষ্কারক হিসেবে যেমন কাজ করে তেমনি দাঁতের গোড়ায় ক্যালকুলাস বা পাথর জমতেও বাধা দেয়। গাজরে ক্যারোটিনের রংযোগ পদার্থ রয়েছে। এই উপাদানটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াই বহু গুনে। এছাড়াও গাজরের আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। গাজর খেলে বেশ উপকার মিলে।
গাজর খাওয়ার নিয়ম
গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পূর্বে জেনে নিন এর নিয়ম সম্পর্কে। গাজর খাওয়ার অনেক নিয়ম থাকে পরিমাণ মতো না খেলে এর উল্টো ক্ষতি হতে পারে। ৬ মাস বয়সী শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলেই খেতে পারেন গাজর। কিন্তু তাদের গাজর খাওয়ার পরিমাণ ভিন্ন রকম হবে। একদম ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত এই পরিমাণ যদি হিসাব করা যায় তাহলে উল্টো দিক করে বললে হয় একজন পণ্য বয়স্ক ব্যক্তি ৭০ থেকে ১০০ পরিমাণ গাজর প্রতিদিন খেতে পারবেন।
এজন্য মাঝারি আকৃতির একটি গাজরই যথেষ্ট। তেমনি ছয় মাসের একটি শিশু জন্য গাজরের একটি বা দুটি টুকরায় যথেষ্ট। এর বেশি পরিমাণ গাজর খাওয়া কিন্তু শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়। গাজর সেদ্ধ করে অথবা কাঁচা খেতে পারেন কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া যায় অথবা গাজর জুস করে খাওয়া যায়। একেবারে যে সিদ্ধ করে খেতে হবে কিন্তু গাজর যদি আপনি এটি যদি রান্না করে খান তাহলে এর পুষ্টিগুণ কিন্তু নষ্ট হয়ে যাবে।
আরো পড়ুন : কাঁচা হলুদ ও মধু খাওয়ার উপকারিতা
তাই নজর খাওয়ার উত্তম নিয়ম হলো কাঁচা খাওয়া। অথবা শুধুমাত্র সেদ্ধ করে খাওয়া। এছাড়াও আপনি গাজর সকালে একটা আর বিকেলে একটা করে খেতে পারেন। গাজরে অনেক ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায়। গাজর ত্বক ফর্সা করতে বা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে অনেক সাহায্য করে থাকে। আগে জানুন গাজর কিভাবে কতটুকু খাওয়া উচিত। নিয়ম জেনে তারপরে গাজর খাবেন।
গাজর খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে
গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানা অনেক জরুরি। গাজর কমবেশি সকলেরই পছন্দ। কিন্তু জানেন কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গাজর বাধা না সহায়ক। গাজর যেহেতু মিষ্টি একটি সবজি তাই প্রশ্নটি খুবই অর্থপূর্ণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক গাজর খেলে ডায়াবেটিস কি বাড়ে। গাজরের মিষ্টির পরিমাণ আছে বলে আমরা মনে অনেকেই মনে করি ডায়াবেটিসে মনে হয় এই সবজি খাওয়া যায় না।
পুষ্টিবিদ ভিক্টোরিয়া হুইটিটন জানাচ্ছেন, গাজর যেকোনো ব্যালেন্সড ডায়েট রাখতে পারেন। এমনকি ব্লাড সুগারের রোগীরাও নিশ্চিন্তে খেতে পারেন এই সবজিটি। গাজা রে প্রচুর ফাইবার, ভিটামিন ও অন্যান্য গুণ আছে। এই সবজির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুব কম। সাধারণত এর জিআই ইনডেক্স ১৬ থেকে ৪১। তবে ডাইবেটিকসরা কাঁচা গাজর বেশি খান। কাঁচা গাজরে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক কম।
রান্না করলে জিআই ইনডেক্স বেড়ে যাবে গাজরের। সব থেকে বেশি জিআই হলো সিদ্ধ করা গাজরে। এ থেকে কিছুটা কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হবে ভাপা গাজরে। গাজরের ফাইবার রক্তের শর্করা বাড়াতে দেয় না। তবে তাই বলে অতিরিক্ত গাজর খাবেন না। এতে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পরিমিত নিয়মের গজল খান ব্লাড সুগারের রোগীরা।
গাজরের বিটা ক্যারোটিন এন্ড এক্সিডেন্ট গ্লুকোজ মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে। গবেষণায় প্রমাণিত ভিটামিন এ এর অভাবেও ব্লাড সুগার বাড়তে পারে। তাই টাইপ টু ডায়াবেটিসে উপকারী গজর তাই ব্লাড সুগারের ডায়েটে গাজর অবশ্যই রাখুন।
গাজর খেলে কি ওজন কমে
গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা প্রায় বিভিন্ন রকম রয়েছে। ওজন কমানোর জন্য আমরা অনেক কিছুই করি কিন্তু এতকিছুর পরে ওজন বেড়েই যাচ্ছে। কিন্তু আপনার কাছে এমন একটি জিনিস রয়েছে যা নিয়মিত খেলে ওজন কমতে বাধ্য সেটি হলো গাজর। একটি বড় মাপের গাজর থেকে ২২ ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়।
গাজর সিদ্ধ করে কাচা কিংবা সালাদ করে যেভাবে খুশি খেতে পারেন আপনি। তবে সালাত বানিয়ে খাওয়ার সময় অবশ্যই মেয়োনিজ তেল অথবা পানির ব্যবহার করবেন না। শুধুমাত্র গাজর, লেবুর রস, ধনেপাতা, কাঁচা মরিচ, গোলমরিচের গুঁড়া ব্যবহার করতে পারেন। গাজরের ডায়েট চলাকালীন সময়ের সুস্থ থাকতে চাইলে সারাদিন অন্তত তিন লিটার পানি খেতে হবে।
পানি কম খেলে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিবে এবং শরীরের সততা থাকবে না। তাই ডায়েটের পাশাপাশি প্রচুর পানি পান করুন। যায় চলাকালীন চা খেলে গ্রীন টি খান। গাজর খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। গাজরের খোসা ছাড়িয়ে নিন সম্ভব হলে। কারণ ইদানিং সবজিতে না নানান ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়।
ডায়েট চলাকালীন সময়ে পানি খাওয়া কমাবে না। এ ডায়েট চার থেকে পাঁচ দিনের বেশি করবেন না। কোন ধরনের অসুস্থ থাকলে বা রোগ থাকলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে তারপরে ডায়েট করবেন। এটা একটি মাসে একবার করলে হবে। গাজর খেলে আপনার ওজন কমাতে অনেক সাহায্য করে থাকবে।
গাজর খেলে কি ত্বক ফর্সা হয়
গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানলে আপনি অবাক হবেন। শীতকালে সব ধরনের সবজি পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্যতম হলো গাজর। গাজরে রয়েছে ভিটামিন, পটাশিয়াম ও আয়রনের মতো প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি। গাজর শুধু পুষ্টি সরবরাহ করে না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বৃদ্ধি করে। ত্বককে উজ্জ্বল করে। প্রতিদিন এক গ্লাস গাজরের জুস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
শরীরের ক্ষতিকর জীবাণু ভাইরাস এবং বিভিন্ন ধরনের প্রবাহ হেলতে কাজ করে। গাজরে থাকা ভিটামিন এ ভিটামিন ই এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট বলিরেখার বিরুদ্ধে লড়াই করে। এবং বিটমেনশন কে দূরে রাখে ফলে ত্বক থাকে উজ্জ্বল ও টানটান। নিয়মিত গাজর খেলে যেমন দৃষ্টিশক্তি ভালো হয় তেমন ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। গজল খেলে তোকে সৌন্দর্য ভেতর থেকে বাড়িয়ে তোলে।
ত্বকের যেকোনো ধরনের ভিটামিনের অভাব পূরণ করে গাজর। তাই নিয়মিত গাজর খাওয়া শুরু করুন। আপনার ত্বক অবশ্যই ফর্সা হয়ে উঠবে। নিয়মিত কাজর ছেলে তোকে স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
গাজর খাওয়ার অপকারিতা
গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার শেষ নেই। গাজর অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে দেখা যাবে যে উপকারের বদলে অপকার হচ্ছে। তাই সঠিক সময় সঠিক পরিমাণে গাজর খেতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত গাজর খেলে তার কিছু অপকারিতা হতে পারে। রমজানে নেওয়া যাক অতিরিক্ত পরিমাণে গাজর খেলে কি ক্ষতি হতে পারে।
১. প্রচন্ড গরমে বেশি পরিমাণে গাজর খেলে অনিন্দ্রার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা যাদের তাদের মাত্রাতিরিক্ত গাজর রক্তচাপের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
২. অতিরিক্ত গাজর খেলে অল্প বয়সী শিশু যাদের নরম দাঁত বা দুধ দাঁত তাদের দাঁতের ক্ষয় দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩. গাজর বাজে কোন ফল বা সবজি বেশি খেলে বদ হজম, কম্বল, গ্যাস কিংবা ডাইরিয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৪. অতিরিক্ত গাজর খাওয়ার ফলে মানুষের অন্তরে অতিরিক্ত বিটা ক্যারোটিন জমে যেতে পারে। অতিরিক্ত বিটা ক্যারোটিন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
৫. অন্যান্য খাবারের পরিমাণের সঙ্গে সুযোগ্য না রেখে গাজর খেলে শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে হাত, পা ও গালের চামড়া জন্ডিসের রোগীর মত হলুদ হয়ে যেতে পারে।
৬. অনেকের এলার্জি থাকে গাজরে। তাই তাদের জন্য খুব সতর্ক হয়ে খাদ্য তালিকায় গাজরের ব্যবহার করতে হবে।
তাই গাজরে যেমন উপকার হয়েছে তেমন তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হয়েছে। এছাড়াও কাজে আরো অনেক ধরনের ক্ষতি করতে পারে।
অল টপিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। মেনে কমেন্ট করুন।
comment url