মরিচের ফলন বৃদ্ধির উপায়

মরিচের ফলন বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আপনি সঠিক পোস্টটি এসেছেন। আমরা অনেকেই জানি না কিভাবে কি করলে মরিচার ফলন বৃদ্ধি পায়। কিভাবে মরিচে সার প্রয়োগ করতে হয়। কোন সার কতটুকু করতে হয় সেই সম্পর্কেও আমরা জানিনা। 

মরিচের-ফলন-বৃদ্ধির-উপায়

এবং কি মরিচের ফুল কেন ঝরে যায় তার উপায় কিছু জানি না। সেই সকল সম্পর্কে আজকের এই পোস্টে আপনাদের বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করবো। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়তে থাকুন। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক নিজের ফলন বৃদ্ধির উপায় কি?

পোস্ট সূচিপত্র : মরিচের ফলন বৃদ্ধির উপায়

 ১. মরিচের ফলন বৃদ্ধির উপায়

মরিচের ফলন বৃদ্ধির অনেক উপায় রয়েছে। মরিচের বাম্পার ফলন পেতে আপনাকে অবশ্যই মরিচের গাছের পরিচর্যা করতে হবে। নিয়মিত জল দিতে হবে।‌ মরিচের ফলন বৃদ্ধি করতে আপনাকে অবশ্যই দুইটি পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। 

  • একটি জৈব লিকুইড কম্পোস্ট সার তৈরি করে আপনার গাছে দিতে হবে। এই কম্পোস্ট সারটি এতটাই কার্যকারী যে আপনি যদি ব্যবহার না করেন তাহলে আপনি বুঝবেন না। এটা তৈরি করতে আপনার খুবই সামান্য টাকা খরচ হতে পারে।
  • থ্রিজি কাটিং। এটি কিভাবে করতে হয় সেটি সঠিক পদ্ধতিতে আপনাদের কে জানানোর চেষ্টা করবো। এমনভাবে আপনি আপনার গাছের যত্ন নিবেন যাতে করে আপনার গাছের উন্নতি হয়। এবং মরিচের ফলন বৃদ্ধি পায়। মরিচের ফলন বৃদ্ধি পেতে অবশ্যই আপনাকে এই দুইটি পদ্ধতি অনুসরণ করে চলতে হবে। মরিচের ফলন বৃদ্ধি করতে অবশ্যই মরিচ গাছের যত্ন নিতে হবে, গাছে অবশ্যই নিয়মিত পানি দিতে হবে। এভাবে মরিচের যত্ন না নিলে আপনি আর মরিচের ফলন বৃদ্ধি কোনদিনও হবে না।

২. মরিচ গাছে কি কি সার দিতে হয়

মরিচের ফলন বৃদ্ধির সাথে সাথে মরিচ গাছে সার দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। মরিচের গাছের বয়স ১৫ থেকে ২০ দিন হলে ৭ দিবেন। গাছ থেকে ৬ ইঞ্চি দূরত্ব রেখে সার দেবেন। গাছে অবশ্যই রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি গভীর গর্ত করতে হবে। গাছের আশেপাশের মাটি গুলো ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। প্রতিটি গাছের গোড়ায় টিএসপি সার ব্যবহার করতে হবে ১৫ থেকে ২০ গ্রাম। 

আপনারা জানেন যে এটিএসপির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস হয়েছে। এতে গাছের কাঠামো শক্তি ও গাছের প্রচুর ফুল ও ফল দিতে সক্ষম হয়। তারপরে আপনারা প্রতিটা গাছের গোড়ায় ২০ থেকে ২৫ গ্রাম ইউরিয়া সার ব্যবহার করবেন। আপনারা জানেন যে গাছটাকে সবুজ রাখতে এবং গাছে প্রচুর কাণ্ড দিতে এই ইউরিয়া সার কাজ করে। এই ইউরিয়া সারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন রয়েছে। 

আরো পড়ুন : কোন মাটিতে কোন ফসল ভালো হয়


এরপর প্রতিটি গাছের গোড়ায় দিতে হবে এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। এই সারের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন ও ফসফরাস রয়েছে। গাছের বিভিন্ন ধরনের যে পোকা আছে এই সার সেই পোকা গুলো দমন করতে সাহায্য করে। এরপর প্রতিটি গাছের গোড়ায় পোড়াডান ৫ গ্রামের মত প্রয়োগ করতে পারেন। তাহলে গাছের যে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই রয়েছে সেই রোগ বালাইগুলো থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে। জৈব সার ৩০ থেকে ৫০ গ্রাম প্রয়োগ করবেন। এই শাড়গুলো প্রয়োগ করার পরে সারি তৈরি করে নিতে হবে। এই সমস্ত সালগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

৩. মরিচ গাছে সার দেওয়ার নিয়ম

মরিচ গাছে ফলন বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই সার ব্যবহার করতে হবে, তবে তার আগে সার দেওয়ার নিয়মটা জেনে নিতে হবে। মরিচ গাছে অন্য কোন সার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র বাজার থেকে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করলেই মরিচ গাছের জন্য যথেষ্ট। আপনাদের যদি কারো কোন মরিচ গাছের পোকাই কেটে ফেলে তাহলে আপনি এই ইউরিয়া সার জেটি আছে সেটি ব্যবহার করতে পারেন। 

সেই সার সাথের পটাশিয়াম সার দুই কেজির সাথে যদি আপনারা ৫০০ গ্রাম সার দিয়ে দেন সেটার সাথে মিক্সড করে ছিটিয়ে দিলে আপনার গাছে যে পোকা গুলো আছে সেগুলো দূর হয়ে যাবে। দুই শতক জায়গার ভেতর চার কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সার শুধুমাত্র ছিটিয়ে দিলে মাটি খুঁড়ে বা গাছের চারিদিক দিয়ে ছিটিয়ে দিলে হয়। 

কারণ মরিচ হচ্ছে এটি স্বল্পকালীন ফসল। আমাদের দেশে সাধারণত এটি শীতকালে চাষ করা হয়।‌ গাছের বয়স যখন ২৫ থেকে ৩০ বছর হবে, তখন গাছে সার প্রয়োগ করতে হবে। যখন গাছের ভেতরের সাত থেকে আটটা পাতার ছেড়ে দেবে তখন আপনারা ওই গাছটিতে সার প্রয়োগ করতে পারেন।

৪. মরিচ গাছে পোকা ধরলে করণীয় কি

মরিচের ফলন বৃদ্ধির সাথে এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে মরিচ গাছের পোকা ধরলে তার করণীয় কি। মরিচ গাছে সাধারণত দুইটি পোকা আক্রমণ করে থাকে।

  • মরিচের জাব পোকা। এই জাব পোকার স্থানীয় কোন নাম নেই। জাব পোকা চেনার উপায়। পোকা দেখতে ক্ষুদ্র সবুজ, খুবই নরম দেহের পোকা। এই প্রকার ক্ষতির ধরন
  • পোকা গাছের কচি পাতা ও ডগার রস চুষে খেয়ে ফেলে। এবং গাছকে দমন করে ফেলে। ও গাছের ক্ষতি করে। পূর্ণবয়স্ক পোকা বেশি আক্রমণ করে। এই পোকা গুলো দমনের জন্য কি করনীয় তা বলবো। জাব পোকা দমনের উপায়। জৈব সার ব্যবহার করা। আক্রমণ বেশি হলে 0.5 গ্রাম আসাটাপ ও এমাটাফ, টিটো, এডমায়ার 0.5 মিলি এবং একতারা 0.5 গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা। তাহলে আশা করা যায় জাব পোকা থাকবে না।
  • মরিচের থ্রিপজ পোকা। এই পোকা দমনের সম্পর্কে এখন আলোচনা করবো। মরিচের থ্রিপজ পোকার আক্রমণে মরিচের পাতা কুকরে যাই। পোকা গাছের কচি পাতা ও ডগার রস চুষে খেয়ে গাছকে দুর্বল করে ফেলে। মরিচের থ্রিপজ পোকা দমনের উপায়। জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা। প্রথম অবস্থায় শুধুমাত্র পানি স্প্রে করা। সাবানের গুড়া 3-5 পাঁচ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা। এভাবে এগুলো প্রয়োগ করলে মরিচ গাছের পোকা লাগবে না এবং লাগলেও সেটি দমন করা সম্ভব হবে।

৫. মরিচের গাছে ফুল ঝরে যাওয়ার কারণ

মরিচ গাছের ফলন বৃদ্ধি করতে হলে অবশ্যই ফুলটাকে ঝরতে দেওয়া যাবে না সেটিকে যেভাবেই হোক ধরে রাখতে হবে। আপনার গাছে কি ফুল ঝরে পড়ছে বা মরিচ না হয়ে ফুলগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি আপনার মরিচ গাছের কচি পাতাগুলো কি হলুদ বর্ণের হয়ে যাচ্ছে এ সমস্যাগুলো হয়ে থাকলে সবকিছু সমাধান আপনারা এখন পাবেন। ফুল ধরবে ঝরবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু অতিরিক্ত ফুল ঝরে যাওয়া এটি কখনো স্বাভাবিক নয়। মরিচ গাছের ফুল ঝরে যাওয়ার প্রধান কারণ দুটি।

মরিচের-ফলন-বৃদ্ধির-উপায়

১. ফুলের পরাগায়ন না হওয়া 

২. গাছে বোরণের অভাব

পরাগায়নের সমস্যা সমাধানের জন্য দারুন একটি টিপস রয়েছে তা হচ্ছে মরিচ গাছকে বাগানের এমন একটি জায়গায় রাখুন যেখানে অন্যান্য ফুল গাছ রয়েছে। এতে পরাগায়ন বেশি হবে। এবং ফুল ঝরে পড়া কমে যাবে।

দ্বিতীয় সমস্যাতে সমাধানের জন্য অবশেষে বোরন সার দিতে হবে। বোরন সার দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই টবের চার পাশের মাটি আলগা করে নেবেন। এরপর প্রতিটি তবে এক চামচ বোরন সার ভালোভাবে মিশিয়ে দেবেন চারপাশে। এমন ভাবে আপনি আপনার গাছের পরিচর্যা করতে থাকলে আপনার মরিচ গাছের ফুল ঝরে যাওয়া বন্ধ করতে পারবেন।

৬. মরিচের ফলন বৃদ্ধির উপকারিতা

মরিচের ফলন বৃদ্ধি করার অনেক ধরনের উপায় রয়েছে। এছাড়া মরিচের ফলন বৃদ্ধির অনেক উপকারিতা ও রয়েছে। মরিচার ফলন বৃদ্ধি হলেন খুব সহজেই সেটি বিক্রি করে আপনার অনেক টাকা আসবে। মরিচ চাষ করে যদি তার ফলন বৃদ্ধি না হয় কোন যদি উপকারিতা না পান তাহলে চাষ করার দরকার কি। মরিচের ফলন বৃদ্ধির উপকারিতার মধ্যে মরিচের ফলন বৃদ্ধি হলে আপনি প্রতি সপ্তাহে অনেক টাকা মরিচ বিক্রি করতে পারবেন। 

আপনার প্রয়োজনীয় সমস্যা গুলো সমাধান করতে পারবেন। মরিচের ফলন বৃদ্ধি হলে আপনি আরো আগ্রহ হবেন মরিচ চাষ করাই। এবং অন্য কেউ চাষ করার পরামর্শ দেবেন। আপনি বেশি মরিচের ফলন বৃদ্ধি করতে পারলে দেশে মরিচের অভাবটা পূরণ হবে। মরিচের দাম একটু কমবে। আপনি অনেক লাভবান হতে পারবেন। এজন্য আপনি মরিচ চাষ করতে পারেন। এছাড়াও মরিচের ফলন বৃদ্ধির আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে।

লেখকের মন্তব্য

মরিচের ফলন বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে আপনাদের সাথে অনেক কথা বললাম। মরিচ চাষ করার আগে অবশ্যই তার সকল বিষয়ে জানা উচিত। কখন কতটুকু সার প্রয়োগ করতে হবে সার প্রয়োগ করার নিয়ম গাছে পোকা দমনের নিয়ম সবকিছু জানা দরকার। সবকিছু জেনে তারপরে মরিচ চাষ করা ভালো। আজকের এই পোষ্টটি করলে আপনি সকল বিষয়ে সম্পূর্ণ বুঝতে পারবেন। আশা করি আজকের এই পোস্টটি করে আপনি উপকৃত হবেন। এমন আরো নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করবেন।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অল টপিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। মেনে কমেন্ট করুন।

comment url