আমলকীর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
আমলকীর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আপনি সঠিক জায়গাতে এসেছেন। আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আমলকীর উপকারিতা ও অপকারিতা
সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করবো। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক আমলকীর উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি?
পোস্ট সূচিপত্র : আমলকীর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
আমলকীর উপকারিতা
আমলকী একটি ঔষধি গুণ। কেনিয় স্নায়ুতন্ত্রের উপরে আমলকী কাজ করে। আমলকী চুল ও দাঁতের জন্য অনেক ভালো কাজ করে থাকে। আমলকী খাওয়ার ফলে রুচি বৃদ্ধি পায়। আমলকী খাওয়ার ফলে রক্তশূন্যতা ও বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে। আমলকী খাওয়ার ফলে ত্বক ভালো থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে সর্দি কাশি থাকলে সেগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায় আমলকীর মাধ্যমে। পারলে প্রতিদিন একটি করে আমলকী খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আরো পড়ুন : ফলমূল খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন
আমলকী খাওয়ার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। পারলে আমলকীর আচার বানিয়ে খেতে পারেন। আমলকী খাওয়ার ফলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আমলকীতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, আমলকী শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আমলকীতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা সূর্যের বেগুনি রশির মত ক্ষতিকর রশি থেকে রক্ষা করে।
চুলের যত্নে আমলকীর উপকারিতা
আমলকী চুলের জন্য অনেক উপকারী। আমলকীর রস চুলকে করে তোলে শক্তিশালী ও মজবুত। প্রতিদিন আমলকীর রস খেলে এটি বয়স হওয়ার আগে চুল পাকা থেকে রোধ করবে। আমলকী খাওয়ার ফলে মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে এবং মাথার ত্বক সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
চুল ভালো, সুস্থ ও সুন্দর রাখতে আমলকীর রস ব্যবহার করতে পারেন। আমলকীর রস মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে এবং ত্বকের পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। আমলকী চুলের খুশকি দূর করে। আমলকীর রস চুলকে ঘন ও মজবুত করে তোলে এবং দ্রুত চুল লম্বা করতে সাহায্য করে। আপনি চাইলে আমলকী দিয়ে হেয়ার ব্যাগ ও বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
আমলকীর রসে রয়েছে ভিটামিন ও খনিজ যা প্রয়োজনীয় কোলাজেন প্রোটিন তৈরি করতে সাহায্য করে। আমলকীর রস চুল পড়া রোধ করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। আমলকীর রস চুলে আরো অনেক পুষ্টি হিসেবে কাজ করে।
আমলকীতে কোন এসিড থাকে
আমলকীতে বিভিন্ন ধরনের এসিড থাকে। যার মধ্যে অন্যতম হলো এ্যামাইনো এসিড। এছাড়াও আমলকীতে আরো অনেক ধরনের এসিড রয়েছে যেমন অ্যাসকরবিক এসিড এবং ভিটামিন সি আরো অনেক জৈব এসিড থাকে। এছাড়াও আরো আছে অনেক এসিড যেমন সাইট্রিক এসিড আমলকীতে থাকে। এই এসিড গুলোই আমলকীর স্বাদ বাড়িয়ে তোলে। সাইট্রিক এসিড আমলকীতে থাকে যা হজমে সাহায্য করে এবং পচন প্রক্রিয়া উন্নত করে।
আমলকীতে ভিটামিন সি থাকে যা শরীরে মুক্ত রেডিকেল গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে। যা কোষের ক্ষতি করতে পারে। এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভিটামিন সি আবার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। আমলকী স্বাস্থ্যর জন্য খুবই ভালো কাজ করে। আমলকীতে থাকা এসিড শরীরের ক্ষতি ও করে আবার শরীরে অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রাখে। এছাড়াও আমলকীতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার যা পুষ্টিগুণে সাহায্য করে।
আমলকীর তেল তৈরির পদ্ধতি
সঠিকভাবে আমলকীর তেল বানানোর জন্য প্রথমে ২০০ গ্রাম এর মতো আমলকী নিতে হবে। তারপরে আমলকী গুলোকে ছোট ছোট করে কেটে নিতে হবে এবং ভেতর থেকে বীজ টাকে আলাদা করে ফেলতে হবে। আমলকীর টুকরো গুলোকে ব্যালেন্ডার বা শিল পাটা দিয়ে বেটে ভালোভাবে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। তারপরে একটি পেইন বসায় দিতে হবে।
আমলকীর পেস্ট যতটুকু আছে ঠিক তার ডাবল পরিমাণ নারিকেল তেল নিতে হবে। তেলটা ভালোভাবে আমলকীর পেস্টের সাথে মেশাতে হবে। তারপর তার ভেতরে দিয়ে দিতে হবে এক চামচ পরিমাণ মেথি এবং মিডিয়াম সাইজের এক টুকরো দারুচিনি। এটি মাথার ত্বকে এন্টিফাঙ্গালের কাজ করবে।
চুলার জালট মিডিয়াম সাইজে রাখতে হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট জ্বাল করে নামিয়ে একটা বাটিতে ঢেলে ছেঁকে নিতে হবে। আমলকীর তেল টা পুরোপুরি ঠান্ডা করে বোতলে ভরে এটিকে ছয় মাসের ও বেশি সংরক্ষণ করতে পারবেন।
আমলকী খাওয়ার নিয়ম
আমলকীতে রয়েছে অনেক পুষ্টি। ত্বক, চুল ও নখের যত্ন থেকে ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধ করতে পারে আমলকী। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ আমলকীতে রয়েছে ফাইরাজ ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের ক্ষমতা। আমলকীর ভাইটো কেমিকেল চোখের জন্য উপকারী। হজম ও দেহের চর্বি কমাতে সাহায্য করে আমলকী। শরীরে সুস্থ তাই তাই প্রতিদিন অন্তত একটি করে আমলকী খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমলকী সাধারণত কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া যায়।
টক ও কষ্টার কারণে আমলকী খেতে ভালো লাগে না। তারা চাইলে অন্য উপায় খেতে পারেন। আচার বা চাটনি বানিয়ে আমলকী ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন। আমলকী মাঝারি আকারে কেটে মিনিট তিনেক পানিতে ডুবিয়ে লবণ ও আদা কুচি কুচি করে কেটে লেবুর রস ও সরিষার তেল দিয়ে মেখে রোদে শুকিয়ে সারা বছর সংরক্ষণ করে খাওয়া যায় এই আমলকী।
আমলকী খেলে কি ক্ষতি হয়
আমরা সকলে জানি আমলকী আমাদের ত্বক চুল হজম প্রক্রিয়া সব কিছুর জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা আমাদের রোগ ও প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিন্তু পুষ্টি ভেদরা বলেছেন কিছু কিছু অবস্থায় আমলকীর ব্যবহার আমাদের ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যেমন আমলকীতে শরীরের এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়।
ফলে যাদের অম্বলের সমস্যা খুব বেশি তারা নিয়মিত আমলকী খেলে তাদের শরীরের এসিডের পরিমাণ অনেকখানি বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও আমলকীতে রয়েছে অ্যান্ডিপ্লেটলেস শক্তি। এর প্রভাবে রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা কমে। যাদের রক্ত পাতলা হয়ে যাওয়ার সমস্যা আছে তাদের জন্য আমলকী একেবারে ভালো না। আমলকী খেলে রক্ত তাদের আরো পাতলা হয়ে যেতে পারে। কোন ধরনের অপারেশনের কথা থাকলেও আমলকী খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। রক্ত বন্ধন না হওয়ার আশঙ্কা।
প্রতিদিন দুইটি করে আমলকী খেলে কি হয়
দেশীয় ফল হিসেবে আমলকী সবার কাছে খুবই পরিচিত। এতে রয়েছে নানা গুণ ও উপকারিতা। আমলকীতে রয়েছে ভিটামিন সি এর একটি অন্যতম উপাদান। প্রতিদিন ১-২ টি আমলকী আপনাকে ভিটামিন সি এর অভাবজনিত রোগ থেকে দূরে রাখবে। একই সঙ্গে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। নিয়মিত দুইটি করে আমলকী। খেলে পেটের আলসার দূর হয়।
এছাড়াও আমলকীর রস কুষ্ঠুকাঠিন্য দূর করে ও পাইলস রোগ থেকে মুক্তি দেয়। প্রতিদিন খাওয়ার আগে মাখন ও মধুর সাথে আমলকীর গুঁড়া মিশিয়ে খেলে ক্ষুধা মন্দা দূর হয়। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে আমলকী খুবই উপকারী। এছাড়াও চোখ লাল হওয়া, চুলকানো ও চোখ দিয়ে পানি পড়া রোধ করতেও আমলকী বিশেষ ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘ মেয়াদী সর্দি কাশির জন্য আমলকী নির্যাস উপকারী।
দেহের অতিরিক্ত মেদ দূর করতে প্রতিদিন দুইটি করে আমলকী খাওয়া অনেক প্রয়োজন। আমলকী চুলের টোনিক হিসেবেও কাজ করে। এবং চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য এটি একটি অপরিহার্য উপাদান। আমলকী খেলে শুধু চুলের গোড়ায় শক্ত হয় না চুল দ্রুত বড় হতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে মধু সঙ্গে দুটি করে আমলকীর রস মিশিয়ে খেলে চর্মরোগ নিরাময় হয়।
খালি পেটে আমলকী খেলে কি হয়
খালি পেটে আমলকী খেলে দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে উন্নতি করে। খালি পেটে প্রতিদিন আমলকী খেলে চোখের পানির সমস্যা বা চোখের ফোলা ভাব দূর করে। সকালে খালি পেটে আমলকীর রস খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা টোনিকের মতো এসিড আছে যা কুষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়।
এজন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আমলকী খাওয়া প্রয়োজন। আমলকীতে শক্তিশালী এন্টি এ্যাকসিডেন্ট আছে। খালি পেটে আমলকী খেলে বা আমলকীর রস খেলে চুল, ত্বক সবই ভালো থাকবে। তাছাড়া হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকবে এবং লিভার ও ঠিক মত কাজ করবে। খালি পেটে আমলকী খেলে মুখের ঘা, বমি হওয়া, হাঁপানি এবং চর্মরোগ থেকে চিরতরে মুক্তি পাবেন। তাই খালি পেটে আমলকী খাওয়া অনেক উপকারী।
লেখকের মন্তব্য
আমলকীর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সাথে অনেক কথা বলেছি। আমলকীর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আগে জেনে নিন। নিয়মিত আমলকী খেতে থাকলে অনেক সমস্যা দূর হবে এবং অনেক উপকারিতা পাবেন। আশা করি পোস্টটি পরে উপকৃত হয়েছেন। এমন আরো নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করবেন।
অল টপিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। মেনে কমেন্ট করুন।
comment url